বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
বিপজ্জনক করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় গোটা দেশে লকডাউন জারি করে ভারত যখন অবস্থা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে – তখন সরকারের কপালে বাড়তি দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ লাগোয়া দেশের সবকটি রাজ্যকে চিঠি লিখে সতর্ক করে দিয়েছে, প্রতিবেশী দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তাদের এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। করোনাভাইরাস সঙ্কটের পাশাপাশি আসন্ন ডেঙ্গু মৌশুমে যদি মশাবাহিত এই রোগটিরও বাড়াবাড়ি শুরু হয় – তাহলে অবস্থা খুব খারাপ মোড় নিতে পারে বলেও অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন। বস্তুত বিগত প্রায় দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছিল গত বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে। লক্ষাধিক মানুষ সেবার ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারাও গিয়েছিলেন প্রায় দুশোর কাছাকাছি। আর এবার বাংলাদেশের সরকারি হিসেবই বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে সারা দেশে প্রায় ৩০০ লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন – যা গত বছরের একই সময়ের পরিসংখ্যানের চেয়েও তিন-চারগুণ বেশি।
এই পটভূমিতেই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে বাংলাদেশ-লাগোয়া রাজ্যগুলোকে আগাম সতর্ক করে দিয়েছে – ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকেই তাদের সাবধান হতে হবে। গত ১০ই এপ্রিল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দিল্লির যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেও এই বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করেন ভারতের স্বাস্থ্য সচিব প্রীতি সুদান। ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের উপস্থিতিতেই তিনি সেদিন বাংলাদেশ-লাগোয়া রাজ্যগুলির উদ্দেশে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আমরা খবর পাচ্ছি ওখানে ডেঙ্গু মারাত্মকভাবে ছড়াচ্ছে।” “কাজেই এই রাজ্যগুলোকে বিশেষভাবে বলব যদিও আপনারা কোভিড-১৯ ঠেকানোর কাজে ব্যস্ত – তারপরও ডেঙ্গুর দিকটাও আপনারা খেয়াল রাখুন।” “আমাদের সংশ্লিষ্ট যুগ্ম-সচিবও এই বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।” এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা বা মিজোরামের মতো বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্যগুলোকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েও মিস সুদান ডেঙ্গুর সম্ভাব্য হামলা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। ডেঙ্গু মোকাবেলার কঠোর প্রোটোকল অবিলম্বে বলবৎ করা, সব প্রকাশ্য স্থানে নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করা, জলের উন্মুক্ত উৎসগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা কিংবা হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডেঙ্গু টেস্ট কিটের ব্যবস্থা রাখার ওপর ওই চিঠিতে কেন্দ্র জোর দিয়েছে।
তবে কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ এপিডেমিওলজিস্ট আশিস মান্না মনে করেন, ভারতে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটা হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে ডেঙ্গুর কোন্ সেরোটাইপ এ বছর হানা দেয়, তার ওপর। ড: মান্না বিবিসিকে বলছিলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা বলে সাধারণত প্রতি এক বছর অন্তর ডেঙ্গুর ইমপ্রিন্টটা একটু হাই হয়। “এর কারণ হল, একটা বিশেষ ডেঙ্গু সেরোটাইপে কেউ আক্রান্ত হলে প্রাকৃতিকভাবে তার একটা ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়। পরের বছরও সেই একই সেরোটাইপ হানা দিলে ওই ইমিউনিটি অনেকটাই কাজ করে – যদিও তার পরের বছর আবার সেটা দুর্বল হয়ে যায়।” “গত দুবছর ধরে আমাদের এখানে প্রাবল্য দেখা গেছে ডেঙ্গুর সেরোটাইপ টু-র। সেই একই সেরোটাইপ এবারও এলে ঝামেলাটা কম থাকবে – কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সেরোটাইপ আসে তার ওপরেই নির্ভর করবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম হবে না বেশি।” বাংলাদেশে বা ভারতেও ডেঙ্গুর পিক সিজন শুরু হয় মনসুন বা মৌসুমি বৃষ্টি শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই – যা আসতে এখনও প্রায় মাসদুয়েক বাকি। কিন্তু এখন থেকে মাসদুয়েকের মধ্যে করোনাভাইরাসের মহামারি স্তিমিত হবে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ – কাজেই এবছর করোনাবাইরাস আর ডেঙ্গু একসঙ্গে মিলে একটা বিপর্যয় বাঁধাতে পারে, সেই আশঙ্কা আসলে কতটুকু?
250 total views, 1 views today