রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে নমুনা জমা দেন চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের এক ব্যক্তি। সঙ্গে একটি মোবাইল নম্বর দেন। পরীক্ষায় গত রবিবার তার করোনা পজিটিভ আসে। বিষয়টি পুলিশকে জানায় বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ। তবে ওই ব্যক্তির দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্তের লোক নিজেকে শামসুল আলম (৫০) বলে দাবি করেন। তার বাড়ি হালিশহরে নয়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে বলেও জানান। শামসুল আলম পুলিশকে আরও জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া দূরের কথা, চার মাস ধরে তিনি রাঙ্গুনিয়ার বাইরে কোথাও যাননি।
নগরীর ডবলমুরিং থানা পুলিশ গত রবিবার এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে (ব্যবস্থাপক) ফোন করে করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে বলে জানান। এর পর তার ঠিকানা জানতে চাইলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। উল্টো বলেন, ‘আপনারা আমার কারণে পুরো ভবন লকডাউন করে দেবেন। আমার সামাজিক সম্মানহানি হবে।’ তখন পুলিশ জানায়, কেবল তিনি ও তার পরিবার বের না হলেই হলো। ভবন লকডাউন করা হবে না। পুলিশের এ প্রস্তাবে ‘ভেবে দেখি, পরে জানাচ্ছি’ বলে ফোন বন্ধ করে দেন করোনা আক্রান্ত সেই রোগী। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বাসার খোঁজ পায়নি পুলিশ। এর আগেও নগরীর বাকলিয়ায় এক লোক নমুনা জমা দেওয়ার সময় ভুল ঠিকানা ব্যবহার করেন। ফল পজিটিভ আসার তিন দিন পর অবশ্য তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ তাকে শনাক্ত করে বাসা লকডাউন করে দেয়।
সাম্প্রতি করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া অনেককেই এ ধরনের ভুল ঠিকানা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, গোপনীয়তা বজায় রাখার মানসিকতা থেকে এ পথ বেছে নিয়েছেন তারা। কিন্তু তাতে সমাজের আরও বেশি ক্ষতি হবে। সেরে না ওঠা পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন থাকতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দরকার সচেতনতা। সেই সঙ্গে আশপাশের মানুষেরও সচেতন হওয়া দরকার। এ জন্য নিয়মানুযায়ী কারও করোনা পজিটিভ আসার পর একটি নির্দিষ্ট সময় তাকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানতে হয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করে থাকে। কেউ যাতে তাদের সামাজিকভাবে হেয় করতে না পারে সে জন্যও পুলিশ ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। এখন ভুলভাল ঠিকানা দেওয়ার কারণে তাদের খুঁজতে অনেক সময় আমাদের কৌশলের আশ্রয় নিতে হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
করোনা আক্রান্তদের এ ধরনের আচরণে পুলিশের পাশাপাশি চিকিৎসকরাও বিরক্ত। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে করোনা পজিটিভদের ঠিকানাসহ দরকারি তথ্য সংগ্রহে রাখতে চান তারা। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু ঠিকানা ভুল দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই তারা শনাক্ত হচ্ছেন না। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ হলেই হাসপাতালে আসতে হবে না। তিনি বাসায় থেকে নিজের চিকিৎসা নিতে পারবেন। আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসাতে এসব রোগ সেরে যায়। কিন্তু তিনি তথ্য গোপন করে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করলে তো সবারই ক্ষতি।’
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভুল ঠিকানা দেওয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশকে হয়রান হতে হয়। এ থানা থেকে ওই থানায় দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তখন সব কাজ বাদ দিয়ে ওই ব্যক্তিকে বের করাই প্রধান কাজ হয়ে ওঠে। গত ৪ মে মাসুদ নামের এক ব্যক্তি নমুনা জমা দেওয়ার সময় নিজের ঠিকানা দেন কদমতলী। করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা যায় ফোনটি বন্ধ। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জানা যায়, ওই ফোন নম্বরটি দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ আছে। আবার প্রথমে ডবলমুরিং থানা পুলিশ নিজ এলাকায় মনে করে ঠিকানা খোঁজ করেও পায়নি। পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় সদরঘাট থানাকে। তারাও এক সপ্তাহে ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পায়নি।
189 total views, 2 views today