বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আমেরিকায় মাস্টার্স করার জন্য জিআরই, টোফেলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মাজেদ (ছদ্মনাম)। বিসিএস কোচিংয়ে ক্লাস নিচ্ছেন অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে। বাবা ঢাকার বস্তিতে ঘর তৈরির কাজ করেন। পরিবারের ৯ ভাই-বোন সবাই বরিশালে পড়ালেখা করছেন। আয়ের একমাত্র উৎস নিজের কোচিং ও বাবার ঘর নির্মাণের টাকা। কিন্তু লকডাউনের কারণে কোচিং এবং বাবার কাজ বন্ধ হওয়ায় পরিবারে ভরণ-পোষণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। টাকার অভাবে গত মাসে ঢাকা ও বরিশালের রুম ভাড়া দিতে পারেননি। এ মাসেই ছেড়ে দিয়েছেন ঢাকার ভাড়া বাসাটা। ৯ সদস্যের পরিবারে আয় রোজগারহীন কিভাবে সংসার চলবে তা জানে না কেউ। মেধাবী এই শিক্ষার্থী কারো কাছে সাহায্য না চেয়ে বিসিএস গণিত পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের তার কাছে অনলাইনে কোচিং করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন থাকায় মাজেদের মতো এমন অনেক শিক্ষার্থীই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। টিউশনি ও খণ্ডকালীন চাকরি না থাকায় মাস শেষে এখন আর নিজেদের খরচ চালিয়ে সংসারে সহযোগিতা করতে পারছেন না। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, প্রতিমাসে নিজের খরচ, বাসা ভাড়া, মেসের মিল খরচসহ যাবতীয় ব্যয়ের একমাত্র উৎস ছিল টিউশনি। এখন সব বন্ধ। পরিবারেরও কোনো সঞ্চয় নেই। ঈদের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক না হলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। দশর্ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বরিশাল শহরে ভাড়া বাসায় থেকে টিউশন করিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। সারাদেশ লকডাউন ঘোষণা করায় আমি গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি। ফলে টিউশনি করানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমার শহরের বাসা ভাড়াসহ নানাবিধ খরচ পরিশোধ করতে হবে। যা এখন আমার পক্ষে কষ্টকর। আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের চলমান আর্থিক সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। কলা ও মানবিক অনুষদের এক শিক্ষার্থী জানান, তৃতীয় সেমিস্টার শুরু হলো কেবল। এ মাসের টিউশন ফি পেলে বই কিনবো ভেবেছিলাম। এখনতো টিউশনি বন্ধ। তাছাড়া দু’মাসের সিট ভাড়াও দিতে হচ্ছে। অথচ এখন আয়ের উৎসই বন্ধ। করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে এসব ধাক্কা একসঙ্গে আসবে। তখন মেসের মিল চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। করোনার চেয়ে এখন এতসব টেনশনই বেশি হচ্ছে।
176 total views, 1 views today